সন্ধ্যা ৮ টায় ঘরে আসলাম। শরীর খুব ক্লান্ত, সারাদিন ক্লাস তার মধ্যে আবার কেমিস্ট্রি প্রাকটিক্যাল ক্লাস! এতেও এতো কষ্ট হতো না যদি না বাঁদরের মতো বু'ইচ্চা চা*ড়া*ল কামরুজ্জামান স্যার ক্লাস না নিতো।
গতোকাল রাতের দুইটা ডিম ভুনা রাতে একটা খাওয়ার পর এখনও একটা আছে, ঐ ডিম দিয়ে ২ টা রুটি খেয়ে নিলাম। সকাল থেকে সারাদিনে কিছু খাওয়া হয়নি শুধু চা, সিগারেট আর পান ছাড়া। পড়াশুনার চাঁপে খাবারের কথা স্বরণ থাকে না, আরো যদি নিজের ইনকামের টাকা দিয়ে সেমিস্টার ফি দিতে হয়, তখন পড়াশুনার ইচ্ছা আরো বেড়ে যায়।
খাওয়া দাওয়া করে বাহিরে বের হলাম, হালকা শীতের হাওয়া, শরৎকাল না হলেও এখনও মাঠে বহু কাঁশফুল। জলবায়ু পরিবর্তনে আবহাওয়ার সাথে সাথে গাছপালাও জীবনযাত্রা বদল করে! মানুষও থেমে থাকে না, এজন্যইতো একটি কালো সুইচ গিয়ার হাতে আমার সামনে ছিনতাইকারী হাজির!
: তাড়াতাড়ি যা আছে বাইর কর!
: তুইতো গাঁজাখোর, আমার কাছে গাঁজা টাজা কিচ্ছু নাই! নেলে একটা সিহারেট অথবা পান নিতে পারোছ!
: ফাইজলামি করিস না টাকা-পয়সা, ফোন যা আছে বাইর কর!
: ভাইরে, তোরা ডিজিটাল যুগের ছিনতাইকারী, মানুষ এখন পকেটে টাকা রাখে না! টাকা রাখে ব্যাংকে, বিকাশে, নগদে, রকেটে......
: ভ্যারভ্যার করা বাদ দে, বিকাশ, নগদ, রকেট বা*লছালে যতো টাকা আছে আমার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার কর!
: আবারও বলদামি করলি! তোর অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করলে তোর নাম্বার আমি জাইনা যামু, তোরে ট্রাক করা একদম ইজি! ছিনতাই কইরা কতোদিন পালাইয়া থাকবি?
: তুইতো অনেক বুদ্ধিমান! আচ্ছা দে তোর মোবাইলডা দে, নাইলে ভুরি গালাইয়া দিমু!
: ভুরি গালাইলে কি হইবে আমি মইরা যামু? আমি বাঁইচাই থাকমু! সেন্সও থাকবে! তারপর আমার ফোন ট্রাক কইরাই তোরে খুইজা পামু, তুই যদি ফোন বিক্রি করোছ, তবুও আমার লস নাই, ফোন ট্রাক কইরা ফোনতো পামু! তোর মতো আচো*দা ছিনতাইকারীরে না পাইলেও চলবে... তার চেয়ে এক কাজ কর, সামনে থেকে পালা, অথবা আমারে খুন কন! এই দুই রাস্তা ছাড়া তোর কোনো উপায় নাই... আর তোরেতো আমি ভালো মতো চিনি, তুই মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের সঞ্জয় না?
অমনি সঞ্জয় আমার ঘাড়ে সুইচ গিয়ার দিয়ে কোঁপ দেয়ার চেষ্টা করলো! আমিও থেমে থাকলাম না, এক ঝাপটায় বাম দিকে সরে গিয়ে ওর ডান হাতের সুইচ গিয়ারটা ধাক্কা মেরে ওর বুকে ঢুকিয়ে দিলাম!
ধাক্কার চোটে সঞ্জয়ের হাতের রোটারার কাফ ছিড়ে গিয়েছে, হাতে কোনো জোড় নেই। বুকের ডান দিকে ছুরি ঢুকেছে, শ্বাসের সাথে সাথে মাস্ক ভিজে বের হচ্ছে রক্তের ফোয়ারা। এমার্জেন্সি নাম্বার ৯৯৯ এ ফোন দেয়ার জন্য ফোন আনলক করলাম। একি! সঞ্জয় আর নিশ্বাস নিচ্ছে না! মর গেলো নাতো!
যেই ভয় সেই কাজ, মরেই গিয়েছে! ৯৯৯ এ আর ফোন দিলাম না। EEE ডিপার্টমেন্টের একটি ছাত্র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের একটি ছাত্রকে খুন করেছে! ৯৯৯ এ ফোন দিলে আগামীকাল বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল ও খবরের কাগজের সাংঘাতিক সাংবাদিকরা এই খবরই প্রচার করবে, কে কিজন্য মেরেছে তা সমাজের তথাকথিত সচেতন(!) সুশীল শ্রেণীর মানুষরা বিশ্বাস করবে না, সবাই যার যার মনের মতো কাহিনী প্রচার করবে।
কি করবো ভেবে পাচ্ছি না, একটা সিগারেট ধরালাম। রাস্তা শুনশান। বিরুলিয়ার এই এলাকায় সন্ধ্যার পর সাধারণত মানুষ চলাচল করে না। ভার্সিটির ছাত্ররা হলেই থাকে। কিন্তু হলে সিট পাওয়ার শর্ত একসাথে দেড় বছর (৬ সেমিস্টার) এর বেতন পরিশোধ করা। প্রায় সারে ৩ লাখ টাকা। এতো টাকা একসাথে না থাকায় আমাকে ঘর ভাড়া করতে হয়েছে। উপরে টিন দেয়া দুই রুমের একটি বাসায় একাই থাকি। ৩০ একর জমির মাঝে এই একটিই ঘর। জমির মালিক গুলশান থাকে। জমি দেখাশুনা করার জন্য আমাকে চাকরি দেয়া হয়েছে এবং থাকার জন্য এই ঘর।
অনেক কিছু করতে হবে।
খন্ড-২
সঞ্জয়ের লাশটা ঘরের ভিতরে টয়লেটে নিয়ে গেলাম। রাস্তা থেকে ঘর পর্যন্ত মটিতে পড়া রক্ত এবং লাশ টানার দাগগুলো পানি ছিটিয়ে ধুয়ে দিলাম। রক্তের ডিএনএ রিপোর্ট যেনো না পাওয়া যায় এজন্য ছিটিয়ে দিলাম ডেক্সট্রান জেল পানিতে মিশিয়ে ছিটিয়ে দিলাম। ডেক্সট্রান জেলের আলামতও যেনো বোঝা না যায়, এজন্য আবার মৃদু মাত্রার নাইট্রাস এসিড পানিতে মিশিয়ে ছিটিয়ে দিলাম। সর্বশেষ নাইট্রাস এসিডের আলামত মোছার জন্য ছিটিয়ে দিলাম ব্লিচিং পাউডার। করোনা এবং ডেঙ্গু আক্রমণের এই সময়ে সকল ঘরের আশপাশেই ব্লিচিং পাউডার ছিটানো মানুষের চোখে পরার মতো কোনো বিষয় নয়!
ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে। পারশিয়ান ছুরি দিয়ে সঞ্জয়ের চোখ দুটো উপরে ফেললাম। কোরবানির গরু কাঁটার চাপাতি দিয়ে চোখ দুটো টুকরো করে টয়লেটে ফেলতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। অতঃপর মাথার চামড়া কেঁটে হাঁড় ফাটিয়ে মস্তিষ্ক বের করে একটি বালতিতে রেখে দিলাম। স্ক্যাপেল দিয়ে পুরো শরীরের চামড়া ছাড়িয়ে শরীরের কেন্দ্র যৌনাঙ্গের কাছে আসতেই মনে কষ্ট লাগলো(!) খুন করতেও কষ্ট লাগে না, কিন্তু নিজে ছেলে হয়ে অন্য ছেলের পুরুষত্ব বিলুপ্ত করতে কেমন যেনো কষ্ট লাগে! কিন্তু কষ্ট পেয়ে কি লাভ, সঞ্জয়তো আর জীবিত হবে না!
পুরো শরীরের মাংস ছাড়িয়ে ১ ইঞ্চি সাইজে টুকরো টুকরো করা শেষ, শুধু নাড়িভুড়ি টুকরো করলাম না, পেটে আধ পঁচা খাবারের দুর্গন্ধ, শা'লার হয়তো কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা(!) গন্ধে আর পান চিবাতে পারলাম না, পান ফেলে সিগারেট ধরাতে হবে। সিগারেট ধরানোর জন্য রুম থেকে বের হবো এমন সময় আরেক বিপদ! সিসি টিভিতে দেখতে পাচ্ছি ঘরের সামনে আমার বন্ধু মেহতাজ হাজির! এই শালা আমার বাসায় আসার আর সময় পেলো না? ওর মনে হয় হায়াত শেষ! মালাকুল মউত এসে গেলে পালানোর সাধ্য কার আছে!
দরজা খোলার পর,
: কিরে রাতুল তোর শরীরে এতো রক্ত! মাছ কাঁটিস নাকি খাঁসি?
: কি কাঁটি চল দেখবি!
দরজাটা বন্ধ করে ওর পিছনে পিছনে যাচ্ছি আমি!
বাথরুমের সামনে যাওয়ার পর মানুষের হাড়গোড়, বালতিতে টুকরো টুকরো মাংস দেখে ভয়ে চিৎকার দেয়ারও সুযোগ পেলো না, অজ্ঞান হয়ে গেলো মেহতাজ! অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর... আমারও সুবিধা হলো, খুন করার সুবিধা! হা হা হা... পৈশাচিক হাসি।
খন্ড-৩
নাভি বরাবর পেটের পাশ থেকে একটা স্ক্রু ড্রাইভার ঢুকিয়ে দিলাম মেহতাজের মেরুদন্ডের লাম্বার ৩-৪ ভার্টিব্রার মাঝে। স্পাইনাল কর্ড ছিড়ে সাথে সাথে মারা গেলো, চিৎকার করারও সুযোগ পেলো না শুধু জিহ্বা বের করে দাঁত দিয়ে জিহ্বা কামড়ে ধরে মুখ বাঁকা করে পরে রইলো।
সঞ্জয়ের লাশটির মতো মেহতাজের লাশটিও টুকরো টুকরো করা শেষ। হাড়গুলো বাদে বাঁকি মাংসের টুকরো, নাড়িভুড়ি সব অল্প অল্প করে টয়লেটে ঢালি, আর ফ্লাশের সুইচ চাঁপি!
হাড়গুলোর অন্য ব্যবস্থা করতে হবে। পানিতে ধুয়ে একটা বড় বালতিতে হাড়গুলো নিয়ে রান্নাঘরে যাচ্ছি, দুইটা চিকনা চিকনা পোলাপানের হাড়েরও ওজনও প্রায় ১৬ কেজি! টানতে কষ্ট হচ্ছে। আস্ত লাশ টানতেও এতো কষ্ট হয়নি হাড় টানতে যতো কষ্ট(!)
গ্যাস স্টোভটা নিঁচে নামিয়ে জ্বালিয়া প্রতিটা হাড় ঝলসে পানিগুলো শুকিয়ে নিচ্ছি। বেশ সময় লাগলো, রাত ৪ টা বেঁজে গেছে!
আমার YAMAHA PSR E-373 পিয়ানোর ব্যাগে দুজনের হাড়গুলো পূর্ণ হয়ে গেলো। সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে কম্পিউটার থেকে রেকর্ডিং ডিলেট করলাম, সিসিটিভি মেশিনের মধ্যের এসডি কার্ডটাও নষ্ট করতে হবে, টয়লেটে ফেলে দেয়া ছাড়া উপায় নেই। সূর্য ওঠার আগেই পিয়ানোর ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গিয়েছি। অটোরিকশা নিয়া তুরাগ নদীর উপর বেরিবাধ ব্রিজের পশ্চিম পাশে নেমে ব্রিজে হেটে হেটে যাচ্ছি। ব্রিজের ঐ পারে পুলিম চেকপোস্ট, অটোরিকশা যেতে পারে না। আমারও সুবিধা হলো, সাথে রিকশাওয়ালা থাকলে আবারও এক সন্দেহের বেড়াজাল! আমি কোনো কাজে রিস্ক নেই না। পানের পিক গিলে একটা সিগারেট ধরিয়ে হেঁটে হেঁটে উঠছি বেরিবাধ ব্রিজের উপর। ব্যাগটি ফেলে দিলাম তুরাগ নদীর পানির স্রোতে, কাজ শেষ, মনে এক তৃপ্ত পৈশাচিক হাসি।
ভার্সিটিতে যাওয়ার পর শুনি গতোকাল রাত থেকে সঞ্জয় এবং মেহতাজ নিখোঁজ। কাল রাতে হলে যায়নি, ফোনেও কল ঢুকছে না! হটাৎ আমার মুখটি চুঁপসে গেলো, মাথার উপর এসে পড়লো বিশাল পাহাড়! এক মস্তবড় ভুল করে ফেলেছি!
ওদের ফোন দুটো আমার ঘরের টয়লেটে ফেলে দিয়েছিলাম। সর্বশেষ জিপিএস সিগন্যাল ট্রাক করতে পুলিশের বেশী কষ্ট হলো না, এখন আমি গারদে(!) দুই ঘন্টা পর দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুসারে আমার ফাঁসি!
বেশী চালাকি করতে গিয়ে ডিজাটাল বিশ্বের প্রযুক্তির বেড়াজালে ফেঁসে গেলাম আমি নিজেই... সকল মিডিয়ায় খবর একটাই,
কুখ্যাত সাইকো কিলার রাতুলের আজ রাত ১২ টা ১ মিনিটে ফাঁসি হবে...
0 Comments